বিশ্বের বিমানবন্দরগুলো যেন এক একটি প্রবেশদ্বার – কোনো দেশে প্রবেশের প্রথম এবং বহির্গমনের শেষ স্পর্শ। যাত্রী পরিষেবা, সুযোগ-সুবিধা এবং সামগ্রিক অভিজ্ঞতার বিচারে কিছু বিমানবন্দর বিশ্বজুড়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ রেখেছে। প্রতি বছর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এই বিমানবন্দরগুলোর র্যাঙ্কিং প্রকাশ করে, যা ভ্রমণকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করে।
আসুন, ২০২৫ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত বিভিন্ন রিপোর্টের ভিত্তিতে বিশ্বের সেরা ১০টি বিমানবন্দর সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:
১. চাঙ্গি বিমানবন্দর, সিঙ্গাপুর (Changi Airport, Singapore): বহু বছর ধরে এই বিমানবন্দরটি তালিকার শীর্ষে নিজেদের স্থান ধরে রেখেছে। অত্যাধুনিক স্থাপত্য, চমৎকার যাত্রী পরিষেবা, অগণিত শপিং এবং ডাইনিংয়ের বিকল্প, মনোরম বাগান এবং আকর্ষণীয় বিনোদন ব্যবস্থা এটিকে অনন্য করে তুলেছে। বিশেষ করে এর “জুয়েল চাঙ্গি” (Jewel Changi) অংশটি একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

চাঙ্গি বিমানবন্দর, সিঙ্গাপুর(Changi Airport, Singapore)
২. হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কাতার (Hamad International Airport, Qatar): বিলাসবহুল স্থাপত্য এবং উন্নত প্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরি এই বিমানবন্দরটি যাত্রীদের জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে। প্রশস্ত টার্মিনাল, আরামদায়ক লাউঞ্জ এবং বিশ্বমানের শপিং ও ডাইনিংয়ের সুবিধা এটিকে অন্যতম সেরা করে তুলেছে।

হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কাতার (Hamad International Airport, Qatar)
৩. সিউল ইনছন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, দক্ষিণ কোরিয়া (Incheon International Airport, South Korea): প্রযুক্তিগত দিক থেকে অত্যন্ত উন্নত এবং কার্যকরী এই বিমানবন্দরটি তার মসৃণ পরিষেবা, দ্রুত ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও, এখানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং বিনোদনের সুযোগ রয়েছে।

সিউল ইনছন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, দক্ষিণ কোরিয়া (Incheon International Airport, South Korea)
৪. টোকিও হানেদা বিমানবন্দর, জাপান (Tokyo Haneda Airport, Japan): সময়ানুবর্তিতা এবং ব্যতিক্রমী গ্রাহক পরিষেবার জন্য এই বিমানবন্দরটি বিশ্বজুড়ে পরিচিত। শহরের কাছে অবস্থিত হওয়ায় এটি যাত্রীদের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক। অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উভয় ফ্লাইটের ক্ষেত্রেই এর ব্যবস্থাপনা খুবই উন্নত।

টোকিও হানেদা বিমানবন্দর, জাপান (Tokyo Haneda Airport, Japan)
৫. নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, টোকিও, জাপান (Narita International Airport, Tokyo, Japan): টোকিওর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর যা আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য প্রধান কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। যদিও হানেদার মতো শহরের কেন্দ্রে নয়, তবুও এর উন্নত পরিষেবা এবং সুযোগ-সুবিধা যাত্রীদের কাছে খুব জনপ্রিয়।

নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, টোকিও, জাপান (Narita International Airport, Tokyo, Japan)
৬. শার্ল দ্য গল বিমানবন্দর, প্যারিস, ফ্রান্স (Charles de Gaulle Airport, Paris, France): ইউরোপের অন্যতম ব্যস্ত এই বিমানবন্দরটি তার স্থাপত্য এবং সুযোগ-সুবিধার জন্য পরিচিত। যদিও কিছু ক্ষেত্রে ভিড় এবং ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ থাকে, তবুও এটি বিশ্বের সেরা বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচিত হয়।

শার্ল দ্য গল বিমানবন্দর, প্যারিস, ফ্রান্স (Charles de Gaulle Airport, Paris, France)
৭. দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, আরব আমিরাত (Dubai International Airport, UAE): বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ততম এই বিমানবন্দরটি বিলাসবহুল শপিং, ডাইনিং এবং বিনোদনের জন্য বিখ্যাত। এটি পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট হাব হিসেবেও কাজ করে।
৮. মিউনিখ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, জার্মানি (Munich Airport, Germany): কার্যকরী ব্যবস্থাপনা, উন্নত যাত্রী পরিষেবা এবং চমৎকার কানেক্টিভিটির জন্য এই জার্মান বিমানবন্দরটি পরিচিত। এখানে যাত্রীদের জন্য আরামদায়ক বিশ্রামাগার এবং বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে।
৯. ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর, তুরস্ক (Istanbul Airport, Turkey): নতুন এবং বিশাল আকারের এই বিমানবন্দরটি খুব অল্প সময়েই বিশ্বের সেরা বিমানবন্দরগুলোর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। আধুনিক স্থাপত্য, প্রশস্ত টার্মিনাল এবং উন্নত সুযোগ-সুবিধা এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক কেন্দ্রে পরিণত করেছে।
১০. জুরিখ বিমানবন্দর, সুইজারল্যান্ড (Zurich Airport, Switzerland): পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, দক্ষতা এবং উন্নত যাত্রী পরিষেবার জন্য এই সুইস বিমানবন্দরটি পরিচিত। এটি ইউরোপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাব এবং যাত্রীদের জন্য একটি মসৃণ ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়?
বিশ্বের সেরা বিমানবন্দরগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের কোনো বিমানবন্দরের নাম সাধারণত দেখা যায় না। আমাদের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ঢাকা) যাত্রী পরিষেবা এবং সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোর উল্লেখযোগ্য স্থান না পাওয়ার কয়েকটি প্রধান কারণ:
- যাত্রী পরিষেবা ও সুযোগ-সুবিধার অভাব: উন্নত বিশ্রামাগার, পর্যাপ্ত শপিং এবং ডাইনিংয়ের বিকল্প, সহজ ট্রানজিট ব্যবস্থা ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা বিশ্বের সেরা বিমানবন্দরগুলোতে থাকলেও আমাদের বিমানবন্দরে এর অভাব রয়েছে।
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষণাবেক্ষণ: আন্তর্জাতিক মানের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাব প্রায়ই দেখা যায়।
- নিরাপত্তা ব্যবস্থা: নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হলেও কিছু আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পৌঁছাতে আরও উন্নতি প্রয়োজন।
- দক্ষতা ও ব্যবস্থাপনা: যাত্রী এবং বিমান চলাচলের ব্যবস্থাপনায় আরও দক্ষতা আনা জরুরি।
তবে, আশা করা যায়, বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোর উন্নয়নের জন্য বর্তমানে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হচ্ছে, যেমন – নতুন টার্মিনাল নির্মাণ এবং বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি – এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে আমাদের বিমানবন্দরগুলোও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হবে এবং বিশ্বসেরাদের তালিকায় স্থান করে নিতে পারবে।
আমাদের বিমানবন্দরগুলোকে আরও উন্নত করার জন্য আপনার মতামত এবং পরামর্শও গুরুত্বপূর্ণ। কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মন্তব্য জানাতে পারেন।