সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে উঠে আসা উদ্বেগজনক তথ্য এবং প্রবাসীদের সাথে প্রতারণার ক্রমবর্ধমান ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এমতাবস্থায়, বিদেশ গমনেচ্ছু বাংলাদেশি কর্মীদের সুরক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারি করা হয়েছে এক জরুরি সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তি।
সম্প্রতি জাতীয় দৈনিকে “রাশিয়ায় যুদ্ধে আট বাংলাদেশি” ও “রাশিয়ায় মৃত্যুমুখে আরো ১৮ যুদ্ধদাস” শীর্ষক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দুটি প্রকাশিত হওয়ার পর দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে কিভাবে কিছু অসাধু দালাল প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে বাংলাদেশি যুবকদের রাশিয়ার মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ঠেলে দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, বেশ কয়েকজন কর্মীর মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে, যা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক।
এছাড়াও, বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে যে, এক শ্রেণির প্রতারক প্রবাসীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে মিথ্যা চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে। ট্যুরিস্ট বা ভিজিট ভিসার মাধ্যমে লিবিয়া, রাশিয়া, লেবানন, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানোর নামে কর্মীদের শারীরিক, আর্থিক ও মানসিক ক্ষতির মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি, কাজের আইনগত সুযোগ না থাকায় অনেক কর্মী প্রাণহানি ও জেল-জরিমানার শিকার হচ্ছেন।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবং বিদেশ গমনেচ্ছুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ১০টি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রকাশ করেছে। এই নির্দেশিকাগুলির মূল উদ্দেশ্য হলো বিদেশে নিরাপদ ও বৈধ উপায়ে কর্মসংস্থানের গুরুত্ব তুলে ধরা এবং দালালচক্রের প্রতারণা থেকে রক্ষা করা।
বিদেশ গমনেচ্ছুদের জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা:
১. অবশ্যই কর্মসংস্থান (ওয়ার্ক পারমিট) ভিসায় বিদেশ গমন করুন। কোনো অবস্থাতেই ট্যুরিস্ট বা ভিজিট ভিসায় কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশ যাবেন না।
২. বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমেই বিদেশ যান। কোনো ব্যক্তি বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রলোভনে পা দেবেন না। শুধুমাত্র সরকার কর্তৃক অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গেই যোগাযোগ করুন।
৩. দালালের মিথ্যা প্রলোভনে বিশ্বাস করবেন না। জলপথ, স্থলপথ বা হেঁটে সীমান্ত পেরিয়ে কাজের সন্ধানে যাবেন না। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং আইনত দণ্ডনীয়।
৪. বিদেশ গমনের আগে আপনার নিয়োগকর্তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন। নিয়োগকর্তার নাম, ঠিকানা, কাজের বিবরণ (বেতন, ভাতা, কর্মের মেয়াদ, থাকা, খাওয়া, ইকামা/ওয়ার্ক পারমিট এবং অন্যান্য সুবিধা) সম্পর্কে নিশ্চিত হন। প্রয়োজনে নিয়োগকর্তার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করুন।
৫. বহির্গমন ছাড়পত্র (Embarkation Clearance) ও গন্তব্য দেশের বৈধ টিকিটের নিশ্চয়তা ছাড়া বিদেশ যাত্রা করবেন না।
৬. ভিসা প্রদানের পূর্বে অবশ্যই ভিসা প্রদানকারী দেশের দূতাবাস বা বাংলাদেশ সরকারের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) থেকে ভিসার সঠিকতা যাচাই করে নিন। কোনো প্রকার তাড়াহুড়ো করবেন না।
৭. বিদেশ গমনের আগে আপনার নিয়োগকর্তার সঙ্গে একটি সুস্পষ্ট কর্মচুক্তিপত্র (Job Contract) স্বাক্ষর করুন। চুক্তির সকল শর্তাবলী ভালোভাবে পড়ে ও বুঝে নিন এবং একটি কপি নিজের কাছে সংরক্ষণ করুন।
৮. আপনার ভিসা, কর্মচুক্তিপত্র, নিয়োগকারী এবং রিক্রুটিং এজেন্সির ঠিকানা ও যোগাযোগের বিস্তারিত তথ্য সংরক্ষণ করুন। প্রয়োজনে এই তথ্য আপনার পরিবারের সদস্যদের সাথে শেয়ার করুন।
৯. বিদেশ গমনের আগে গন্তব্য দেশে অবস্থিত বা নিকটবর্তী বাংলাদেশ দূতাবাসের ঠিকানা ও জরুরি ফোন নম্বর অবশ্যই সংগ্রহ করে রাখুন। অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে দূতাবাসের সহায়তা চাওয়া যেতে পারে।
১০. সোশ্যাল মিডিয়ায় (ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদি) প্রচারিত ভুয়া চাকরির বিজ্ঞাপনে বিশ্বাস করবেন না। কোনো চাকরির প্রস্তাব বিশ্বাস করার আগে রিক্রুটিং এজেন্সি বা নিয়োগকর্তার তথ্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট (https://probashi.gov.bd/) অথবা বিএমইটির ওয়েবসাইট (https://bmet.gov.bd/) অথবা প্রবাসবন্ধু কল সেন্টার নম্বর ১৬১৩৫-এ ফোন করে যাচাই করুন।
শেষ কথা
বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ নিঃসন্দেহে অনেক তরুণের স্বপ্ন। তবে, এই স্বপ্ন পূরণের পথে কিছু অসাধু চক্র ওঁত পেতে থাকে। তাদের মিথ্যা প্রলোভনে পা দিয়ে নিজের জীবন ও সম্পদ বিপন্ন করবেন না। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এই সতর্কবার্তা মেনে চলুন এবং নিরাপদে, বৈধ পথে বিদেশ যাত্রা করুন। আপনার সচেতনতাই আপনাকে প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।