বর্তমানে বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন দেখেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। উন্নত জীবনের আশায় মানুষ সবকিছু বিক্রি করে হলেও বিদেশে পাড়ি দিতে চায়। কিন্তু এই স্বপ্নের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক ভয়ংকর ভুয়া ভিসা আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেট। সাধারণ মানুষকে নিঃস্ব করে দেওয়া এই চক্রটি নতুন নতুন উপায়ে তাদের প্রতারণার জাল বিছিয়ে যাচ্ছে। এই সিন্ডিকেটের মূলহোতা একজন বাংলাদেশি নাগরিক, যিনি একজন অনারারি কনস্যুলারের আড়ালে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছেন।
প্রতারণার নতুন কৌশল: আড়ালে একজন কূটনীতিক
রাজধানীর একটি অভিজাত অফিসে, দামি গাড়ি আর ভিআইপিদের সঙ্গে ছবি তুলে একজন কূটনীতিকের ছদ্মবেশে এই প্রতারক চক্র নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তারা নিজেদের পরিচয় এমনভাবে তুলে ধরে যে, যে কেউ সহজেই তাদের বিশ্বাস করে ফেলে। তাদের প্রতারণার এই জাল এতটাই নিখুঁত যে, বহু মানুষ ইউরোপ-আমেরিকার উন্নত জীবনের স্বপ্নে বিভোর হয়ে তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন নিজেদের সম্পদ এবং সঞ্চয়। বিনিময়ে তারা পেয়েছে শুধুমাত্র ভুয়া ভিসা ও জাল টিকিট। এই ভুয়া ভিসা আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেট হাজার হাজার মানুষের পাসপোর্ট ও নকল ভিসা তৈরি করে তাদের জীবন নষ্ট করে দিচ্ছে।
এই চক্রটি শুধু ভিসা জালিয়াতি করেই ক্ষান্ত হয় না, তারা জাল সিলমোহর, ভুয়া চার্টার্ড বিমান বুকিং টিকিট এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে তোলা সাজানো ছবি ব্যবহার করে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করে। অনেক ভুক্তভোগী তাদের শেষ সম্বল বিক্রি করে এই চক্রের ফাঁদে পা দিয়েছেন এবং এখন পাওনাদারদের ভয়ে বাড়িছাড়া।
এই প্রতারক চক্রের মূলহোতা
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মধ্য আমেরিকার একটি ছোট দেশ বেলিজ-এর অনারারি কনস্যুলার হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া একজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী এই ভুয়া ভিসা আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেট-এর প্রধান। তিনি ২০২১ সালের ৪ মার্চ এই পদে নিয়োগ পান। তার মূল দায়িত্ব ছিল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করা, কিন্তু এই পরিচয়ের আড়ালে তিনি ভয়ংকর প্রতারণার জাল তৈরি করেন। তার এই চক্রে তার স্ত্রীও একজন প্রধান সহযোগী। তারা একসাথে মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে।
এই চক্রটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ভিআইপিদের সাথে নিজেদের ছবি ছড়িয়ে দেয়, এমনকি ফটোশপের মাধ্যমে এডিটেড ছবিও ব্যবহার করে। এসব ছবি দেখিয়ে তারা সাধারণ মানুষকে বোঝায় যে তাদের রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। এই কৌশল ব্যবহার করে তারা মানুষকে ইউরোপ-আমেরিকার উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখায়।
কিভাবে নিজেদেরকে রক্ষা করবেন?
এই ধরনের প্রতারক চক্র থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। যেকোনো রিক্রুটিং এজেন্সির সাথে কাজ করার আগে অবশ্যই তাদের লাইসেন্স ও অন্যান্য কাগজপত্র যাচাই করে নিন। ভিসা, চাকরির চুক্তিপত্র এবং অন্যান্য কাগজপত্র সঠিক কি না তা সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস বা ওয়েবসাইটে গিয়ে যাচাই করে দেখুন। কোনো অবস্থাতেই লোভনীয় অফারের ফাঁদে পা দেবেন না।
বৈধ এবং সঠিক উপায়ে বিদেশে যাওয়ার জন্য আপনি জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-এর https://www.bmet.gov.bd/ তালিকাভুক্ত এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। বিস্তারিত জানতে আপনি আমাদের ওয়েবসাইটের এই https://worldtravelsbd.com/contact-us/ লিঙ্কে ভিজিট করতে পারেন। সবসময় মনে রাখবেন, একটি নিরাপদ ও বৈধ পথ আপনার জীবনের ঝুঁকি কমিয়ে দেবে।