ক্লান্ত দিনের শেষে এক টুকরো শান্তি? প্রকৃতির নীরব আহ্বানে সাড়া দিতে চান? তাহলে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে পাহাড়ের কন্যা নাইক্ষ্যংছড়ির মনোমুগ্ধকর উপবন পর্যটন লেক। ঈদের আনন্দকে আরও রঙিন করতে এবার এখানে পর্যটকদের ঢল নেমেছে, ভেঙেছে অতীতের সকল রেকর্ড।
এই পর্যটন স্পটের আকর্ষণ কেবল মনোরম দৃশ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং নিরাপদ ভ্রমণের নিশ্চয়তা একে করেছে আরও জনপ্রিয়। শুধু তাই নয়, নাইক্ষ্যংছড়ির দ্বিতীয় পর্যটন কেন্দ্র শৈলচূড়াতেও একই রকম ভিড় দেখা গেছে ঈদের শুরু থেকেই।
এখানে এসে আপনি হারিয়ে যাবেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ, সবুজের সমারোহ আর শান্ত লেকের জল আপনার মনকে এক অন্যরকম প্রশান্তি এনে দেবে। এখানকার ঝুলন্ত সেতুতে হেঁটে বেড়ানো, কারুকার্যময় বসার স্থানে বিশ্রাম নেওয়া অথবা কিডস জোনে শিশুদের আনন্দ উল্লাস দেখা – প্রতিটি মুহূর্তই যেন এক নতুন অভিজ্ঞতা। কায়াকিং বোটে চড়ে লেকের শান্ত জলে ভেসে বেড়ানোর অনুভূতিও অসাধারণ।
কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের কোলাহল ছেড়ে যারা একটু ভিন্ন স্বাদ পেতে চান, তাদের জন্য নাইক্ষ্যংছড়ি যেন এক স্বর্গরাজ্য। এখানকার পাহাড়ি পরিবেশ মনকে এতটাই মুগ্ধ করে যে মনে হয় যেন আকাশে উড়ছেন। ওয়াচ টাওয়ার থেকে দূরের পাহাড়ের চূড়াগুলোর দৃশ্য এক কথায় অসাধারণ।
শুধু দেখাই নয়, এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের বিনোদনের সুযোগ। অনুমতি নিয়ে লেকের জলে মাছ ধরা, ছোট-বড় সকলের জন্য বিভিন্ন রাইড এবং থাকার সুব্যবস্থা – সব মিলিয়ে পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে দারুণ সময় কাটানোর এক আদর্শ স্থান এই উপবন লেক। প্রকৃতির কোলে পিকনিকের মজাও এখানে অন্যরকম।
দিনের শেষে কর্মব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি দূর করতে নানা পেশার মানুষও বিকেলে ভিড় জমান এই সৌন্দর্যমন্ডিত পর্যটন কেন্দ্রে। রোদ আর ছায়ার লুকোচুরি খেলা দেখতে দেখতে মন ভরে যায় এক অনাবিল আনন্দে।
এক সময়ের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ভয়াল পার্বত্য নাইক্ষ্যংছড়ি আজ ইউএনও মতিউর রহমানের হাত ধরে এক আধুনিক পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। কক্সবাজার জেলার কাছে অবস্থিত হওয়ায় এটি এখন চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্য।
কীভাবে যাবেন:
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রামু চা-বাগান এলাকা থেকে পূর্ব দিকে ১১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই পৌঁছে যাবেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরে। এরপর আঁকাবাঁকা ২ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে হাতের ডান দিকে সামান্য গেলেই দেখা মিলবে সেই কাঙ্ক্ষিত উপবন লেকের। কক্সবাজার বা দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রাইভেট গাড়ি অথবা লোকাল মিনিবাস/সিএনজি টেক্সিতে করেও এখানে আসা যায়।
উপরে পাহাড়ের চূড়ায় শৈল্পিকভাবে তৈরি বসার স্থানগুলোতে বসলে চারপাশের প্রকৃতির মনোরম দৃশ্য মনকে মুগ্ধ করে তোলে। সড়কের বাম দিকে দেখা যায় বিশাল জলপ্রপাত, আর তার পাশেই রয়েছে স্থানীয় উপজাতীদের ছোট একটি গ্রাম।
ঈদের এই লম্বা ছুটিতে সরকারি-বেসরকারি চাকুরিজীবী থেকে শুরু করে সকল স্তরের মানুষ ছুটে এসেছেন এই প্রকৃতির টানে। শিশু, আবালবৃদ্ধবনিতা সকলের পদচারণায় মুখরিত উপবন লেক যেন এক আনন্দমেলায় পরিণত হয়েছে। কেউ দোলনায় দোল খাচ্ছে, কেউ লেকের পাড়ে বসে গল্প করছে, আবার কেউ প্যাডেল বোটে ভেসে বেড়াচ্ছে শান্ত জলে।
স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ীরা জানান, দৃষ্টিনন্দন এই পাহাড়ি স্থানটি সারা বছরই পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এখানে পর্যাপ্ত হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে। পূর্বের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা পর্যটন লেকের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন, যার ফলস্বরূপ আজকের এই সুন্দর ও সুসজ্জিত উপবন।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন সর্বদা তৎপর রয়েছে। পর্যটকরা এখানে এসে প্রকৃতির মাঝে মুক্ত মনে আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। ভবিষ্যতে আরও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
আর অপেক্ষা কিসের? প্রকৃতির অপরূপ রূপ আর শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশ উপভোগ করতে এখনই পরিকল্পনা করুন নাইক্ষ্যংছড়ি উপবন ভ্রমণের।