Menu

হজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা মুসলিমদের জন্য অবশ্যপালনীয়। এটি মূলত তিন প্রকারের হয়ে থাকে এবং এর কার্যাবলী জিলহজ মাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে সম্পন্ন হয়। নিচে হজের প্রকারভেদ ও আদায় করার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:


হজের প্রকারভেদ

হজ মূলত তিন প্রকারের হয়ে থাকে:

১. ইফরাদ (Ifrad): এই প্রকার হজে শুধু হজ পালনের নিয়ত করা হয়। মক্কায় পৌঁছে প্রথমে তাওয়াফ ও সাঈ করা হয় এবং ইহরাম না ভেঙে হজের সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। ১০ই জিলহজ তারিখে কোরবানি ও মাথা মুণ্ডানোর পর ইহরাম শেষ হয়। এই প্রকার হজকারীকে ‘মুফরিদ’ বলা হয়।

২. কিরান (Qiran): এই প্রকার হজে একই সাথে হজ ও ওমরার নিয়ত করা হয় এবং একই ইহরামে উভয়টি সম্পন্ন করা হয়। মক্কায় পৌঁছে প্রথমে ওমরাহর তাওয়াফ ও সাঈ করা হয় এবং ইহরাম না ভেঙে হজের কার্যাদি সম্পন্ন করা হয়। এই প্রকার হজকারীকে ‘ক্ব whilst’ বলা হয়।

৩. তামাত্তু (Tamattu): এই প্রকার হজে প্রথমে শুধু ওমরাহর নিয়ত করে ইহরাম বাঁধা হয়। ওমরাহ সম্পন্ন করার পর চুল কেটে বা মাথা মুণ্ডন করে ইহরাম খুলে ফেলা হয়। এরপর হজের সময় (৮ই জিলহজ) নতুন করে শুধু হজের জন্য ইহরাম বাঁধা হয় এবং হজের কার্যাদি সম্পন্ন করা হয়। বাংলাদেশ থেকে অধিকাংশ হাজি এই প্রকার হজ পালন করে থাকেন। এই প্রকার হজকারীকে ‘মুতামাত্তি’ বলা হয়।


হজ আদায় করার পদ্ধতি

হজের কার্যাবলী মূলত জিলহজ মাসের ৮ তারিখ থেকে শুরু করে ১২ তারিখ পর্যন্ত ৫ দিনে সম্পন্ন হয়। নিচে এর মূল ধাপগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:

৮ই জিলহজ (তারবিয়ার দিন)

  • মিনায় রওয়ানা: হাজিরা মক্কার নিজ নিজ আবাসন থেকে ইহরামের অবস্থায় মিনার দিকে রওয়ানা হন এবং সেখানে যোহর, আসর, মাগরিব ও ইশার নামাজ আদায় করেন
  • মিনায় রাত্রি যাপন: হাজিরা মিনাতেই রাত্রি যাপন করেন।

৯ই জিলহজ (আরাফার দিন)

  • আরাফাতের দিকে রওয়ানা: ফজরের পর হাজিরা আরাফাতের ময়দানের দিকে রওয়ানা হন।
  • আরাফাতে অবস্থান: আরাফাতে যোহর ও আসরের নামাজ একত্রে (কসর করে) আদায় করেন। সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন এবং দোয়া ও মোনাজাতে মশগুল থাকেন। আরাফাতে অবস্থান হজের অন্যতম ফরজ।
  • মুজদালিফার দিকে রওয়ানা: সূর্যাস্তের পর হাজিরা মুজদালিফার দিকে রওয়ানা হন।
  • মুজদালিফায় রাত্রি যাপন: মুজদালিফায় পৌঁছে মাগরিব ও ইশার নামাজ একত্রে আদায় করেন এবং সেখানেই রাত্রি যাপন করেন।

১০ই জিলহজ (কোরবানির দিন)

  • মুজদালিফায় অবস্থান: ফজরের নামাজ আদায় করে মুজদালিফায় কিছু সময় অবস্থান করেন এবং দোয়া করেন।
  • কঙ্কর নিক্ষেপ: এরপর জামারাতুল আকাবায় (বড় শয়তানকে) ৭টি পাথর নিক্ষেপ করেন
  • কোরবানি: এরপর কোরবানি করেন।
  • মাথা মুণ্ডন বা চুল ছাঁটা: কোরবানি করার পর মাথা মুণ্ডান অথবা চুল ছাঁটেন। এর মাধ্যমে ইহরামের প্রথম ধাপ শেষ হয় এবং কিছু নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়।
  • তাওয়াফে ইফাদা ও সাঈ: এরপর মক্কায় ফিরে কাবা শরীফের তাওয়াফে ইফাদা (ফরজ তাওয়াফ) ও সাঈ করেন। এটি হজের একটি রুকন।

১১ই ও ১২ই জিলহজ (তাশরিকের দিন)

  • মিনায় অবস্থান: হাজিরা মিনায় ফিরে যান এবং সেখানে অবস্থান করেন।
  • কঙ্কর নিক্ষেপ: এই দুই দিন জামারাতের তিনটি স্তম্ভে (ছোট, মধ্যম ও বড়) প্রতিটি স্তম্ভে ৭টি করে পাথর নিক্ষেপ করেন
  • মিনা ত্যাগ: ১২ই জিলহজ সূর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করা উত্তম, তবে কেউ চাইলে ১৩ই জিলহজ পর্যন্ত মিনায় অবস্থান করে পাথর নিক্ষেপ করতে পারেন।

হজের শেষ আনুষ্ঠানিকতা

সবশেষে হাজিরা মক্কায় ফিরে এসে বিদায়ী তাওয়াফ (তাওয়াফুল বিদা) করেন। এটি মক্কাবাসীদের জন্য ওয়াজিব নয়, তবে বাইরের হাজিদের জন্য এটি হজের শেষ আনুষ্ঠানিকতা।

উল্লেখ্য যে, হজের এই মূল কার্যাবলী ছাড়াও ইহরাম বাঁধা, তালবিয়া পাঠ করা, মাকামে ইব্রাহীমে নামাজ পড়া, জমজমের পানি পান করা ইত্যাদি আরও কিছু সুন্নত ও গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে। হজ পালনের পদ্ধতি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার জন্য আপনি বিভিন্ন ইসলামিক বই, ওয়েবসাইট বা অভিজ্ঞ আলেমদের সাহায্য নিতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

world travels

owner
View All Articles