ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ হলো হজ। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জীবনে একবার হজ পালন করা ফরজ। তবে এই মহিমান্বিত ইবাদত সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়মকানুন ও ফরজ কাজ রয়েছে। এর কোনো একটি বাদ পড়লে হজ পূর্ণাঙ্গ হবে না। নিচে হজের তেমনই তিনটি প্রধান ফরজ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
১. ইহরাম বাঁধা: হজের প্রথম পদক্ষেপ
ইহরাম হলো হজের নিয়তে বিশেষ পোশাক পরিধান করা এবং নির্দিষ্ট কিছু বিধি-নিষেধ মেনে চলা। হজের জন্য নির্ধারিত স্থান অর্থাৎ মীকাত boundary-তে পৌঁছে ইহরাম বাঁধতে হয়। ইহরামের পোশাক পুরুষদের জন্য দুটি সেলাইবিহীন সাদা কাপড় (একটি পরিধানের জন্য এবং অন্যটি গায়ের উপর রাখার জন্য) এবং মহিলাদের জন্য শালীন ও সাধারণ পোশাক।
ইহরাম বাঁধার সময় হজের নিয়ত করা এবং আল্লাহ তাআলার দরবারে হাজির হওয়ার বার্তা সম্বলিত তালবিয়া পাঠ করা সুন্নত। তালবিয়া হলো:
لَبَّيْكَ اللّٰهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لَا شَرِيْكَ لَكَ
উচ্চারণ: লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক, লা শারীকা লাক।
অর্থ: “আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি হাজির। আমি হাজির, আপনার কোনো শরীক নেই, আমি হাজির। নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা, নিয়ামত ও সাম্রাজ্য আপনারই, আপনার কোনো শরীক নেই।”
ইহরামের মাধ্যমে একজন হাজী পার্থিব সকল প্রকার আরাম-আয়েশ ও সৌন্দর্য ত্যাগ করে আল্লাহর প্রেমে নিজেকে উৎসর্গ করেন।
২. আরাফাতের ময়দানে অবস্থান: হজের মূল কেন্দ্রবিন্দু
আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রোকন বা ফরজ। ৯ই যিলহজ্জ তারিখে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এই ময়দানে অবস্থান করা অপরিহার্য। এই দিনে হাজীগণ আল্লাহর কাছে নিজেদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং মোনাজাত করেন।
ইসলামের ইতিহাসে আরাফাতের ময়দানের গুরুত্ব অপরিসীম। এখানেই বিদায় হজের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। এই দিনের ইবাদত ও কান্নাকাটির মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার রহমত ও ক্ষমা লাভ করা যায়। কোনো হাজী যদি এই দিনে আরাফাতের ময়দানে সামান্য সময়ের জন্যও উপস্থিত না থাকেন, তবে তার হজ পূর্ণ হবে না।
৩. তাওয়াফে যিয়ারত: কাবার চারপাশে প্রদক্ষিণ
তাওয়াফে যিয়ারত হজের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ। ১০ই যিলহজ্জ তারিখে মিনায় পাথর নিক্ষেপ (রমী) ও কুরবানি করার পর কাবা শরীফের চারপাশে সাতবার প্রদক্ষিণ করাকে তাওয়াফে যিয়ারত বলে। এটি হজের অন্যতম প্রধান আনুষ্ঠানিকতা।
কাবা শরীফ মুসলিম উম্মাহর কিবলা ও আল্লাহর ঘর। তাওয়াফের মাধ্যমে হাজীগণ আল্লাহর প্রতি তাদের আনুগত্য ও ভালোবাসা প্রকাশ করেন। শারীরিক সক্ষমতা অনুযায়ী হেঁটে অথবা হুইলচেয়ারের মাধ্যমে এই তাওয়াফ সম্পন্ন করতে হয়।
এই তিনটি ফরজ কাজ যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমেই একজন মুসলমানের হজ পূর্ণাঙ্গ ও কবুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আল্লাহ তাআলা সকল হাজীর হজ কবুল করুন এবং আমাদের সকলকে এই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত পালনের তাওফিক দান করুন। আমিন।