সৌদি আরবে ভ্রমণ বা কাজের পরিকল্পনা করছেন? ভিসার ধরন এবং এর প্রসেসিং নিয়ে প্রায়শই জটিলতা দেখা যায়। সৌদি আরবের ভিসা মূলত আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য এবং সময়ের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। এখানে কিছু প্রচলিত সৌদি ভিসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো, যা আপনার বিদেশ যাত্রার পরিকল্পনায় সহায়ক হতে পারে।
১. আমেল মঞ্জিল (Amel Manzil)
“আমেল মঞ্জিল” একটি আরবি শব্দগুচ্ছ, যার অর্থ হলো গৃহকর্মী বা গৃহভিত্তিক কর্মী। এই ভিসার মাধ্যমে সাধারণত গৃহকর্মে সহায়তাকারী, যেমন – বাড়ির কাজের লোক, ড্রাইভার, মালী, শিশু তত্ত্বাবধায়ক বা বয়স্কদের সেবক ইত্যাদি পদে লোক নিয়োগ করা হয়। সৌদি আরবে এই ভিসার প্রচলন ব্যাপক। এই ভিসার অধীনে কর্মীরা একটি নির্দিষ্ট বাড়িতে বা পরিবারের অধীনে কাজ করেন।
২. আমেল আইডি (Amel ID)
“আমেল আইডি” সরাসরি কোনো ভিসার নাম না হলেও, এটি সৌদি আরবে ভিসা প্রক্রিয়াকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে। এটি সম্ভবত কর্মীর আইডেন্টিফিকেশন বা পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কোনো বিষয়কে নির্দেশ করে, যেখানে কর্মীর জন্য একটি নির্দিষ্ট আইডি বা রেজিস্ট্রেশন নম্বর তৈরি করা হয়।
সৌদি আরবে বিদেশী কর্মীদের জন্য একটি ওয়ার্ক পারমিট বা এমপ্লয়মেন্ট আইডি কার্ড থাকা বাধ্যতামূলক। “আমেল আইডি” এই ধরনের কোনো ডকুমেন্টেশন বা তার প্রক্রিয়াকরণের প্রতি ইঙ্গিত করতে পারে, যা কর্মীর বৈধভাবে কাজ করার অনুমতি এবং তার পরিচিতি নিশ্চিত করে।
৩. খাদামা ভিসা (Khadama Visa)
“খাদামা” একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ হলো গৃহপরিচারিকা বা মহিলা গৃহকর্মী। সুতরাং, “খাদামা ভিসা” বিশেষভাবে মহিলা গৃহকর্মীদের জন্য জারি করা হয়। এই ভিসার মাধ্যমে মূলত গৃহস্থালি কাজের জন্য মহিলাদের নিয়োগ করা হয়। আমেল মঞ্জিল ভিসার মতোই এটি গৃহভিত্তিক কাজের জন্য, তবে এটি বিশেষভাবে মহিলাদের জন্য প্রযোজ্য।
৪. মুয়াস্সাসাহ (Muassasah)
“মুয়াস্সাসাহ” একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ হলো প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, ফাউন্ডেশন বা এস্টাবলিশমেন্ট। ভিসার প্রসঙ্গে, “মুয়াস্সাসাহ ভিসা” সাধারণত সৌদি আরবের কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের অধীনে কাজ করার জন্য যে ভিসা দেওয়া হয়, তাকে বোঝায়। এটি আমেল মঞ্জিল বা খাদামা ভিসার মতো গৃহভিত্তিক না হয়ে বরং বাণিজ্যিক বা সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
এই ভিসার অধীনে কর্মীরা একটি নির্দিষ্ট কোম্পানি বা সংস্থার বিভিন্ন পদে কাজ করতে পারেন, যেমন – নির্মাণ শ্রমিক, ফ্যাক্টরি কর্মী, অফিসের কর্মচারী, টেকনিশিয়ান ইত্যাদি। এই ধরনের ভিসাকে অনেক সময় কোম্পানী ভিসা বা প্রাতিষ্ঠানিক ভিসাও বলা হয়ে থাকে।
৫. ওমরাহ্ ভিসা (Umrah Visa)
“ওমরাহ্” ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা হজ্বের একটি সংক্ষিপ্ত রূপ। “ওমরাহ্ ভিসা” হলো সেই অনুমতিপত্র যা সৌদি আরব সরকার ওমরাহ্ পালনের উদ্দেশ্যে গমনেচ্ছু বিদেশী নাগরিকদের জন্য জারি করে থাকে। এই ভিসা সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বৈধ থাকে এবং এর অধীনে শুধুমাত্র ওমরাহ্ পালন ও সৌদি আরবের নির্দিষ্ট কিছু পবিত্র স্থান (যেমন মক্কা ও মদিনা) পরিদর্শনের অনুমতি থাকে। এই ভিসায় কাজের অনুমতি থাকে না।
৬. জিয়ারাহ্ ভিসা (Ziyarah Visa)
“জিয়ারাহ্” একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ হলো পরিদর্শন বা সাক্ষাৎ। “জিয়ারাহ্ ভিসা” সাধারণত সৌদি আরবের কোনো পবিত্র স্থান, ঐতিহাসিক স্থান অথবা কোনো আত্মীয়স্বজনের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে জারি করা হয়।
ওমরাহ্ ভিসার সাথে এর কিছুটা মিল থাকলেও, জিয়ারাহ্ ভিসা আরও ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন, মদিনায় রাসূল (সাঃ) এর রওজা জিয়ারত করা, অন্যান্য ইসলামিক ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন করা অথবা সৌদি আরবে বসবাসরত পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করার জন্য এই ভিসা হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, ব্যবসায়িক সাক্ষাতের জন্যও এই ধরনের স্বল্পমেয়াদী ভিজিট ভিসা বা জিয়ারাহ্ ভিসা ব্যবহৃত হতে পারে।
আশা করি এই তথ্যগুলো আপনাকে সৌদি আরবের বিভিন্ন ধরনের ভিসা সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা দিতে সাহায্য করবে। আপনার সৌদি আরবে যাত্রার জন্য কোন ভিসাটি সবচেয়ে উপযুক্ত হবে, তা নির্ধারণ করতে এটি সহায়ক হবে।