Menu

সংক্ষিপ্ত হজ নির্দেশিকা: আপনার পবিত্র যাত্রার একটি পূর্ণাঙ্গ গাইড

হজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম এবং শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম মুসলিম নারী-পুরুষের জন্য জীবনে একবার হজ করা ফরজ। হজের বিভিন্ন নিয়মকানুন পালনের জন্য শারীরিক সক্ষমতা জরুরি, তাই অপেক্ষাকৃত কম বয়সে হজ পালন করা ভালো। হজ করার নিয়ত করলে সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যবস্থাপনায় কিছু আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয়। এই নির্দেশিকায় হজের নিয়মকানুন সম্পর্কে সংক্ষেপে ধারণা দেওয়া হয়েছে।


সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ সম্পাদন

সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে চাইলে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত তারিখের মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা দিতে হয়। টাকা জমা দেওয়ার পর একটি ফরম পূরণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা দিতে হবে।


বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ সম্পাদন

বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে চাইলে সরকার অনুমোদিত হজ এজেন্সির ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা দিতে হয়। এজেন্সি খরচের হিসাব এবং কী কী সুবিধা দেবে, তা হজ অফিস থেকে সরবরাহ করা একটি চুক্তিনামায় উল্লেখ করা থাকে, যা অবশ্যই করে নিতে হবে। মনে রাখবেন, সরকার কর্তৃক অননুমোদিত কোনো এজেন্সি বা কাফেলাকে টাকা দিলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।


হজের খরচের খাতসমূহ

হজের খরচের বিভিন্ন খাত রয়েছে, যেমন:

  • এম্বারকেশন ফি
  • ভ্রমণ কর
  • ইনস্যুরেন্স ও সারচার্জ
  • সার্ভিস চার্জ (ব্যাজকার্ড, পুস্তিকা, কজিবেল্ট)
  • মোয়াল্লেম ফি
  • আপৎকালীন ফান্ড
  • মক্কা ও মদিনায় বাড়ির ভাড়া
  • হজযাত্রীদের সৌদি আরবে অবস্থানকালে খাওয়া-দাওয়া, কুরবানী ও অন্যান্য খরচ।

বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে গেলে খরচের এই খাতগুলো প্রযোজ্য হলেও, বাড়ি ভাড়া ও খাওয়া খরচের পরিমাণে কিছুটা পার্থক্য থাকতে পারে।


হাজীদের জন্য সরকারি সুবিধাসমূহ

বাংলাদেশ সরকার হাজীদের জন্য বেশ কিছু সুবিধা প্রদান করে:

  • বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ভ্যাকসিন প্রদান।
  • জেদ্দা বিমানবন্দর, মক্কা ও মদিনায় চিকিৎসা এবং বিনামূল্যে ঔষধ সরবরাহ।
  • মক্কা ও মদিনায় অবস্থিত হজ মিশনের মাধ্যমে হাজীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সহায়তা করা।

স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পুলিশ ছাড়পত্র

  • স্বাস্থ্য পরীক্ষা: প্রত্যেক হজযাত্রীকে নিজ জেলার সিভিল সার্জন (অথবা মেডিকেল কলেজের পরিচালক, যেখানে মেডিকেল কলেজ আছে) কর্তৃক গঠিত মেডিকেল বোর্ড থেকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে এবং একটি মেডিকেল সার্টিফিকেট নিতে হবে। মেনিনজাইটিস ইনজেকশন গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক। স্বাস্থ্য সনদ (Medical Certificate) ছাড়া কেউ হজে যেতে পারবেন না।
  • পুলিশ ছাড়পত্র: সৌদি কর্তৃপক্ষের নিয়ম অনুযায়ী, হজে যাওয়ার আগে হজযাত্রীদের পুলিশ ছাড়পত্র নিতে হয়। সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যবস্থাপনার হাজীদের জন্য এটি বাধ্যতামূলক এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এর ব্যবস্থা করে থাকে।

প্রশিক্ষণ

হজে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের নাম তালিকাভুক্ত করার পর ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রথম ধাপে জেলা বা বিভাগীয় অফিসে হজ বিষয়ক প্রশিক্ষণের আয়োজন করে। দ্বিতীয় ধাপে, হজ যাত্রার ৩ দিন আগে হজ ক্যাম্পে অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকদের মাধ্যমে নিবিড় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। হজ বিষয়ক তথ্যের জন্য ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, হজ অফিস এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জেলা বা বিভাগীয় অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।


হজযাত্রীদের করণীয়: ঢাকা হজ ক্যাম্পে

  • রিপোর্ট করা: সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের হজ অফিস থেকে পাঠানো অনুমতিপত্রে উল্লেখিত তারিখে সকাল ১০টার মধ্যে হজ ক্যাম্পে রিপোর্ট করতে হবে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের সংশ্লিষ্ট এজেন্সি কর্তৃক নির্ধারিত তারিখে হজ ক্যাম্পে উপস্থিত হয়ে মেডিকেল সার্টিফিকেট যাচাই করাতে হবে এবং এজেন্সির পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে।
  • প্রয়োজনীয় কাগজপত্র: হজ ক্যাম্পে রিপোর্ট করার সময় সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের অনুমতিপত্র, ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার রশিদ এবং মেডিকেল সার্টিফিকেট সঙ্গে আনতে হবে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের মেডিকেল সার্টিফিকেট এবং এজেন্সির পরামর্শ অনুযায়ী অন্যান্য কাগজপত্র সঙ্গে আনতে হবে।
  • ক্যাম্পের পরিবেশ: হজ ক্যাম্পের ডরমিটরিতে শুধুমাত্র হজযাত্রীদের থাকার অনুমতি দেওয়া হয়, তাই সেখানে আত্মীয়-স্বজনদের আনা উচিত নয়। হজ ক্যাম্পে ধূমপান করা নিষেধ।
  • খাবার ও খরচ: হজযাত্রীদের জন্য ক্যাম্পে নির্ধারিত মূল্যে খাবার সরবরাহের জন্য ক্যান্টিন খোলা থাকে। সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের সৌদি আরবে খাবার খরচ ও কোরবানীর টাকা হজ ক্যাম্পের ব্যাংক বুথ থেকে সৌদি রিয়াল বা মার্কিন ডলার অথবা উভয় মুদ্রার টি.সি.-এর মাধ্যমে দেওয়া হয়। বেসরকারি হজযাত্রীরা তাদের এজেন্সির সাথে করা চুক্তি অনুযায়ী খাবার ও কোরবানীর ব্যবস্থা করবেন। হজযাত্রীরা চাইলে অতিরিক্ত ৩৫০ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ সৌদি রিয়াল সাথে নিতে পারেন।
  • গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র: টিকেট, পাসপোর্ট, বৈদেশিক মুদ্রা ও অন্যান্য জরুরি কাগজপত্র পাওয়ার পর তা খুব সাবধানে রাখতে হবে, কারণ এগুলো হারালে হজে যাওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। টিকেট, পাসপোর্ট ও ব্যাংক ড্রাফট নম্বর আলাদা নোটবুকে লিখে রাখলে ভালো হয়।
  • মালপত্র: হজযাত্রীরা প্রয়োজনীয় জিনিস বহন করার জন্য চামড়া/ক্যানভাস/রেক্সিনের একটি স্যুটকেস নিতে পারেন, তবে টিনের ট্রাঙ্ক বা স্যুটকেস নেওয়ার অনুমতি নেই। বেশি মালপত্র, যেমন – কাঁথা, কম্বল, বালতি, বদনা ইত্যাদি না নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ব্যাগের উপর অবশ্যই নাম, পাসপোর্ট নম্বর ও ঠিকানা লিখতে হবে।
  • পোশাক: হজযাত্রীদের কমপক্ষে ২ সেট এহরামের কাপড়, ২ সেট পায়জামা-পাঞ্জাবি, ২টি লুঙ্গি, ২টি টুপি, ২টি গেঞ্জি, ২ জোড়া স্যান্ডেল এবং ২টি তোয়ালে/গামছা সঙ্গে নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া হজের আগে ও পরে পরার জন্য পছন্দসই পোশাক নেওয়া যেতে পারে, তবে মহিলা হজযাত্রীদের জন্য সালোয়ার-কামিজ নেওয়া উত্তম।
  • প্রশিক্ষণ: হজ ক্যাম্পে অবস্থানকালে হজ অফিস কর্তৃক আয়োজিত প্রশিক্ষণ মনোযোগ দিয়ে গ্রহণ করুন, কারণ এটি হজ যাত্রার আগে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • যাত্রা প্রস্তুতি: যেসব হজযাত্রী সরাসরি মক্কায় যাবেন, তাদের যাত্রার ৬ ঘণ্টা আগে এহরামের কাপড় পরতে এবং ৪ ঘণ্টা আগে হজ ক্যাম্পের ইমিগ্রেশন কাউন্টারে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। যারা সরাসরি মদিনায় যাবেন, তাদের ঢাকাতে এহরাম বাঁধার প্রয়োজন নেই, তারা যাত্রার ৪ ঘণ্টা আগে ইমিগ্রেশন কাউন্টারে রিপোর্ট করবেন। বেসরকারি হজযাত্রীরা তাদের এজেন্সির পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবেন।
  • নিরাপত্তা: ছুরি, কাঁচি, সুই ইত্যাদি ধারালো জিনিস সাথে নেওয়া নিষেধ, তবে এগুলো লাগেজে নেওয়া যেতে পারে। ঢাকা হজ ক্যাম্প থেকে মক্কার মোয়াল্লিম অফিস পর্যন্ত বিমান টিকেট, পাসপোর্ট, মেডিকেল সার্টিফিকেট ও বৈদেশিক মুদ্রা অবশ্যই নিজের সাথে রাখতে হবে, কোনোভাবেই লাগেজের মধ্যে রাখা যাবে না।

আপনার হজ যাত্রা সফল ও বরকতময় হোক!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

world travels

owner
View All Articles